পিরিয়ড! চারটি বর্ণে ঘটিত এক শব্দ। কত সহজ,সাবলীল উচ্চারণ।
অথচ এর সাথে জরিয়ে আছে প্রতিটা মেয়ের সুখ-দুঃখ। কতটা অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে পার করতে হয় এই মূহুর্তকে।
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস,রুপা সমাপনী পরিক্ষা দিয়ে নানী বাড়ি গিয়েছে। অনেক দিন থেকে সে লক্ষ্য করছে তার শরীরের অস্বাভাবিক পরিবর্তন। হঠাৎ করে ঘুমানো অবস্থায় তার প্রচণ্ড পেটের ব্যাথা শুরু হয়,ঘুম ভেঙ্গে যায়, শীতের রাত তার মনে হচ্ছে সে পুরো ভিজে আছে। কেমন পস্রাব পস্রাব ভাব আসছে।
নানীকে নিয়ে ওয়াসরুমে যায়, গ্রামে লাইটের ব্যবস্থা ছিল, তাই দেখতে পায় নি কেন ভিজে আছে সে। নাহ পস্রাব করার পরও মনে হচ্ছে কি যেন পড়ে,অসহ্য পেটের ব্যাথা। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। কোনরকম কষ্টে রাত পার হলো।
ভোরের আলো ফুটতেই দৌড়ে চলে আসলো টয়লেটে। টয়লেটে গিয়ে সে চিৎকার করবে না কি করবে বুজতে পারছে না। পুরো রান রক্তে লেপ্টে আছে, এখনোও টুপ টুপ করে রক্ত পড়ছে। রুপা বুজতে পারছে না কি করবে, কাকে বলবে,কি বলবে?
কোনরকম রক্ত এবং সেলোয়ার ধুয়ে বেড়িয়ে আসে।
নাহ তাও থামছে না, পেটেও প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। তাই সে দ্রুত বাড়ি চলে আসছে। এসে কিছুক্ষণ পর পর টয়লেট যাচ্ছে আর সেলোয়ার চেন্জ করতেছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তার রানে লেপ্টে থাকা রক্ত তার কাছে মনে হচ্ছে মুরগী জবাই করলে জবাইর জায়গায় যেভাবে ছোপ ছোপ রক্ত পরে থাকে সেরকম।
অস্বস্তি লাগে তার।
একটা সময় কোন উপায় না পেয়ে রুপা তার বড় বোনকে বলে। তার বড়বোন শুনে হেসে দেয় এবং তার মাকে জানায়। রুপার মা রুপাকে একটা পেন্টি ও কাপড় দেয়। কিন্তু রুপার তা পরতে ভাল লাগে না,বার বার সে কাপড়টা বের করে উল্টে পাল্টে রাখে। রুপার মা রুপার এরুপ কান্ড দেখে তাকে বকে এবং পিরিয়ড বা মাসিক সম্পর্কে তাকে বুজিয়ে বলে।
তবে মাসে যে একটা নির্দিষ্ট সময় পিরিয়ড শুরু হতো তখন রুপা খুব হেজিটেশনে ভুগতো। স্কুলে যেতে ইচ্ছে করতে না। প্রচুরক পেটে ব্যাথা, চুলকানী,খাওয়ায় অরুচি। তার উপর বান্ধবীরা জানলে কি হবে। নানান জিনিস। তখন তার কাছে পিরিয়ড বা মাসিক খুব একটা সহজ ছিল না এখনকার মতো। একটা লজ্জা জনিত বিষয় কাজ করতো।
(বি:দ্র:- পিরিয়ড গোপনীয়তার কিছু নয়,,আর সকলের উচিত তার মেয়ে শিশুকে এ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যাতে এরুপ পরিস্থিতিতে সে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারে। না জানার কারণে কোন ভয় বা লজ্জা পেয়ে না বসে। এতের ক্ষতির সম্ভবনাই বেশি। পিরিয়ড বা মাসিকের সময় কাপড় নয় সাস্থ্য সম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যাবহার করা,স্যাবলন ও কুসুম গরম পানি দ্বারা পিরিয়ড এর জায়গা ধুয়ে রাখা। অসহ্য যন্ত্রণায় পার করলেও এই পিরিয়ডই একজন নারীর জীবনের নারীত্বকে সার্থক করে তুলে?
লেখক : কুনসুমা বিনতে শাহজাহান, শিক্ষার্থী