পিরিয়ড এবং আমার ভাবনা

পিরিয়ড নিয়ে আমাদের অনেক কৌতুহল তবে সচেতনতা নেই। খেয়াল করলেই দেখবেন স্কুলের ছেলে মেয়েরা বইয়ে এসব পড়লে হাসাহাসি করে । তার মানে পিরিয়ড হাসি তামাশার বস্তু? কোনো মেয়ের জামায় দাগ দেখলেই সেটা নিয়ে এক লঙ্কাকাণ্ড। কেনো?আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো এমন হয়ে যাচ্ছে কেনো..সাহায্য করার মন-মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

একজন মেয়ে হওয়ার কারণে সে ১৩ বছর বয়স থেকে পিরিয়ড আমার হচ্ছে  । খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।তারপর ও এটাকে এতো অস্বাভাবিক মনে করা হয় কেনো?আপনি পিরিয়ডের ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলে ও আপনাকে সব কাজ করতে হবে। আপনার স্বামী বা কারো থেকে আপনি সাপোর্ট পাবেন না।খুব কম সংখ্যক মেয়েরা ই পায়।

আমাদের শেখানো হয়েছে এসব কথা ছেলেদের সামনে বলতে নেই,কষ্ট করে হলে ও দাঁত চেপে থাকতে হবে।ছেলে রা তো বুঝেই না।।কারণ তাদের শেখানো হয় নি।

অনেক মেয়ে আছে পিরিয়ড হলে একদম জীবন্ত লাশ হয়ে যায়।।সেটা দেখে কিছু মেয়েরা ও বলে:

ইশ..ঢং, কই আমাদের তো এরকম হয় না। আমি জানি না এগুলো কোন ধরণের মানুষ।

পিরিয়ড এর সময় একটু মুড সুইং হয়। এটা নিয়ে আবার ঝামেলা।

স্বামী তো বুঝতেই চায় না।আপনি সবসময় ঠিক সময়ে তাকে খাবার রান্না করে খাওয়ান।কিন্তু ওই কয়েকটা দিনে অল্প একটু এদিক সেদিক হলে আপনার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিবে।একটু সহানুভূতি আপনি পাবেন না।

আর আপনাকে শুনিয়ে দিবে-আমার মা,বোনকে এরকম করতে দেখি নি।।

আমাদের ভুল এই জায়গায় । আমরা জিনিস গুলো আড়াল করা শিখিয়েছি । এই কষ্ট টা তারা বুঝতে পারে না।পারে না বলেই রমজানে রোজা,রাখো নি বলে,হাসাহাসি করে।প্যাড কিনতে গেলে হা করে দেখে থাকে।কোনো মেয়েকে এই ধরণের পরিস্থিতি তে দেখলে সেটা নিয়ে মজা করে।সাহায্য নয়।

যদি তাদের একটু শেখানো হতো,বোঝানো হতো..পিরিয়ড কোনো হাসি তামাশার বস্তু না।ওই কয়েকটা দিন একটা মেয়েকে কি পরিমাণ শারীরিক, মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়।অনেকে বলে এটা সংকোচের বিষয়।আমার কথা হচ্ছে সংকোচের বিষয় টা নিয়ে আপনাকে জানতেি হবে,আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।

আমি বলছি না আপনার পরিবারের কোনো মেয়ের পিরিয়ড হলে তাকে মাথায় তুলে রাখবেন।

একটু সহানুভূতি দেখান,অল্প একটু।

প্রতিদিন মুরগী,মাছ ভালো ভালো খাবার খান,এই কয়েকটা দিন আপনার স্ত্রী হয়তো পারছে না।।।চিৎকার চেঁচামেচি না করে কষ্ট করে খেয়ে নিন।এটা করলে কি হবে জানেন?,হাজার কষ্ট হলে ও আপনার স্ত্রী আপনার জন্য ভালো খাবারই রান্না করবে।ভালোবাসা দিয়ে অনেক কিছুই জিতে নেওয়া যায়।।উল্টো টি করলে আপনার সংসার কখনোই সুখের হবে না।।

আপনার বোনের কাজ গুলোতে একটু সাহায্য করুন।সবসময় সে আপনার মাকে সাহায্য করে।বাসায় মেহমান আসলে,আপনার বোন যদি অসুস্থ হয়ে পরে থাকে।আপনি করুন।একটু করলে আপনার জাত যাবে না।

আপনার মেয়ে বান্ধবী থাকলে,ব্যাপার টা নিয়ে হাসাহাসি না করে,একটু বোঝার চেষ্টা করুন।পড়াশোনার খুব চাপ থাকলে চেষ্টা করেন,একটু সাহায্য করার।এই অল্প সাহায্যের প্রতিদান আপনি অনেক বড় করে পাবেন।

প্রেমিকা ঝগড়া করতে চাইলে,একটু সহ্য করুন।পিরিয়ডের সময় বেশীরভাগ মেয়ের মুড সুইং হয়।সে  ইচ্ছা করে করছে না,ব্যাপার টা কে সিরিয়াসলি নিয়ে আপনি ও ঝগড়া করবেন না

সচেতনতা পরিবার থেকেই গড়ে তুলতে হবে।কোনো ছেলে যদি একটা দিনের জন্য হলে ও পিরিয়ডের কষ্ট বুঝতো দেশ থেকে ইভটিজিং,ধর্ষণ উঠে যেতো।

সবশেষে বলবো,পিরিয়ড নিয়ে অনেক অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে।মেয়েদের কে যেভাবে শেখানো হচ্ছে..  ছেলে গুলোকে ও শেখাতে হবে।যাতে তারা একজন মেয়ের পাশে কাপুরুষ না হয়ে প্রকৃত পুরুষ হয়ে দাঁড়ায়।

লেখিকা: মুবাশ্বেরা ইফ্ফাত, শিক্ষার্থী