প্রচন্ড পেট ব্যথায় বিছানার এদিক থেকে ওদিক গড়াগড়ি করছি। মনে হচ্ছে এখনি মরে গেলে ভালো হতো। এতো ব্যথা আর সহ্য হয় না। পা থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত টনটনে ব্যথা। মাথাটাও প্রচুর ব্যথা করছে। এটার অবশ্য এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। মাসে একবার এমন হয়। হ্যাঁ এটা পিরিয়ডের ব্যথা।
দরজার ওপাশ থেকে মা উঁকি দিয়ে দেখে গেল আমি ব্যথায় কাতরাচ্ছি। ব্যথা এখনো কমেনি। হঠাৎ মা এলো একহাতে গরম পানি ভর্তি একটি গরম পানির ব্যাগ আর অন্য হাতে একমগ গরম দুধ নিয়ে। মা বলল-
মা: এই নে, এটি খেয়ে নে। আর এই গরম পানির ব্যাগটা পেটে দিয়ে রাখ, ব্যথা কমে যাবে।
আমি: এইসবে কিছু হবে না। আমার মেজাজ খুব খারাপ আছে এখন। যাও তো।
মা: আরে বোকা মেয়ে হবে। পিরিয়ডের সময় গরম পানির স্যাক পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আর গরম দুধ খেয়ে শরীরে শক্তি হবে। যা দেহের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
আমি: এই জিনিসটা আমার কাছে খুবই অসহ্য লাগে। কেন যে মেয়েদের এমনটা হয় ?
মা: তুমি কি জানো এটার জন্য তুমি কতো শ্রেষ্ঠ হয়ে গিয়েছ।
আমি: মানে কি? এটার তো একটা সমস্যা আমার মতে।
মা: তুমি জানো এমন অনেক মেয়ে আছে যাদের পিরিয়ড হয় না। আর এর জন্যই তুমি শ্রেষ্ঠ।
আমি: কিন্তু মা এটাতে শ্রেষ্ঠ হওয়ার মতোন কি আছে?
মা: তুমি কি জানো যাদের পিরিয়ড হয় না তারা কখনো মা হতে পারে না। আর মা হওয়া অবশ্যই শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপার। কারণ হাদিসে আছে-”মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। আর তুমি তো জানোই যে বেহেশত কতো দামি। তাহলে তো বুঝতেই পারছো তুমি কতোটা দামি হবে ভবিষ্যতে। আর এটা তোমার সেই দামি হওয়ার প্রথম ধাপ।
আমি: কিন্তু মা আমি যে এই সময় প্রচন্ড ব্যথায় ভুগি। এর থেকে কি বাঁচার কোনো উপায় আছে ?
মা: এই সময় সবারই কম বেশি ব্যথা অনুভব হয়। যা স্বাভাবিক। আর তাছাড়া এই ব্যথার জন্য তুমি গরম পানির স্যাক দিতে পারো, এতে ব্যথা কিছুটা কম হবে।
আমি: মা, আমার মেজাজ খুব খারাপ থাকে এই সময়। এই নিয়ে কি তুমি আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারো?
মা: আমি জানি এই সময় প্রায়ই মুড সুইং হয়ে থাকে। এর জন্য তুমি যে কোনো বই পড়তে পারো অথবা কোনো মুভি দেখতে পারো।
আমি: ঠিক আছে মা। আমি তাহলে একটা বই পড়ি এখন।
শেষ হলো মা-মেয়ের কথা। একটু পরেই মা নিয়ে আসলো দুইটি চকলেট।
মূল কথা-
পিরিয়ডের সময় ব্যথা স্বাভাবিক। তবে ব্যথা ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পিরিয়ডের সময় প্রায়ই মুড সুইং হয়। তাই এ সময় নিজের প্রতি যত্নশীল হয়ে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করুন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য চাইবেন ও অন্যদের সাহায্য করবেন।
লেখক : ইফফাত আনজুম মাইশা, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ