রুখসানা। নারায়নগঞ্জের জাহীন নিটওয়্যারস লিমিটেডের একজন নারী কর্মী। পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিনের জন্য আর ভাবতে হয় না তাকে। ফার্মেসিতে গিয়ে ন্যাপকিন কেনার মতো ‘বিব্রতকর’ অবস্থাতেও পড়তে হয় না। ‘এখন মেশিনে কার্ড ছোয়ালেই ন্যাপকিন বেরিয়ে আসে। একসাথে এক প্যাকেটও কিনতে হয় না। মেশিনে দশ টাকা দিলেই মিলে যায় প্যাড’। হাসিমুখে বলতে থাকে রুখসানা।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের স্বাচ্ছন্দ বাড়াতে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ‘জ্যোতি’ নামের এই স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনটি বসিয়েছে আইওটি প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠান ভার্টিক্যাল ইনোভেশনস লিমিটেড। নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে অবস্থিত জাহীন নিটওয়্যারস লিমিটেডের কারখানায় রুখসানার মতো এমন প্রায় এক হাজার নারী পোশাক শ্রমিক সহজেই স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারছেন এই মেশিন থেকে।
পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর জীবনে অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে একজন নারীকে নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। এই সময়টাতে নারী ও কিশোরীদের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছেন ভার্টিক্যাল ইনোভেশনস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা রেজওয়ান আহমেদ নূর। দেশেই তৈরি করছেন স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। বিভিন্ন স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে সেগুলো বিনামূল্যে স্থাপনেরও কাজ করছে রেজওয়ান নূরের প্রতিষ্ঠানটি।
ভেন্ডিং মেশিন তৈরি ও সহজে, স্বল্পমূল্যে ন্যাপকিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার এই প্রচেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, পিরিয়ড চলাকালীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ পিরিয়ড প্যাড বা স্যানিটারি ন্যাপকিন এখনো সহজলভ্য নয়। দোকান বা ফার্মেসি থেকে কেনার সময় প্রায়ই বিভিন্ন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের কিশোরী ও নারীদের। সামাজিকভাবে পিরিয়ড বিষয়টি এখনও ট্যাবু হিসেবেই বিরাজ করছে, যা আমাদের কিশোরী ও নারীদের সামাজিক, শারিরীক ও মানসিক বিকাশে নানান বাধার তৈরি করে। এ কারনেই নারীদের স্কুলে কিংবা কর্মক্ষেত্রে ন্যাপকিন পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা আমাদের। পাশাপাশি নারীকে তার প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন করা ও পিরিয়ড নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কারগুলো ভেঙে দেয়ার জন্য নানা ভাবে কাজ করছে আমাদের প্রতিষ্ঠান।
পোশাক কারখানায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন সম্পর্কে জাহীন নিটওয়্যারস লিমিটেডের মহাপরিচালক এম জামালউদ্দিন জানান, নারী কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পিরিয়ডকালীন সময়ে যাতে তারা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন, সেই প্রত্যাশাতেই মেশিন বসানো হয়েছে। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
রুখসানার মতো এখন অনেক নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং ব্যবহার করছেন। তাদের ফার্মেসিতে যেতে হচ্ছে না। পিরিয়ডের টেনশন করতে হচ্ছে না। কারখানায় কাজ করতে পারছেন নিশ্চিন্তে। পিরিয়ডের কারনে আগে যে খরচ হতো, সেটাও কমে এসেছে তুলনামূলক ভাবে।