আমরা গর্বিত নারী, আমরা সবই পারি

আপনাদের সামনে আজ আমিই পৃথিবীর সকল মা, বোন আর সকল নারীর প্রতিনিধি হিসেবে তাদের জীবনের এক অপ্রকাশিত সত্য গল্প তুলে ধরবো।

একজন মেয়ে যখন সবে ১১ থেকে ১২/১৩ বছরে পা দেয়, অর্থাৎ যখন শৈশবের গণ্ডি পেরিয়ে কৈশোরে পা দেয় তখন ই তার পরিচয় ঘটে ছয় বর্ণের শব্দ PERIOD বা মাসিক এর সাথে। একবার ভাবুন তো?

একটা ছোট্ট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় এর গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ পা রাখতে না রাখতেই এক বিরাট পরিবর্তন এর মুখোমুখি হয়। যে মেয়ে টা সামান্য রক্ত দেখলেই ভয় পেয়ে যেতো, সে যখন তার শরীর থেকে রক্তের ধারা প্রবাহিত হতে ‌‌‌দেখে ,তার মনের অবস্থা তখন কেমন হতে পারে ভেবে দেখুন তো? সে কতটা ঘাবড়ে যেতে পারে তা বলার চেয়ে কল্পনা করাই বোধহয় ভালো। সেই সময় টায় একটা মেয়ে কতটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কার কাছে তার এই সমস্যার কথা জানাবে তা নিয়ে চিন্তিত থাকে। তারপর মা কিংবা বড় কাওকে বিষয় টা জানায়। যদি তার মা কিংবা বড় কেউ এই বিষয়ে সচেতন না হয় তখন মেয়েটা চরম ভোগান্তিতে পড়ে।গ্ৰামের মেয়ে হলে অসচেতন মা হয়ত মেয়ে কে নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে বলে।তিনি হয়ত জানেন ই না যে নোংরা কাপড় ব্যবহার করার ফলে তার মেয়ে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আর মেয়ে ও হয়ত লজ্জার কারনে ব্যাবহার কৃত কাপড় ঠিক করে পরিস্কার করতে পারে না কিংবা শুকাতে পারে না। এতে করে রোগ জীবাণুর সংক্রমণ বাড়ে।

আর এই অস্বাস্থ্যকর মাসিক ব্যবস্থাপনা মেয়েটার প্রজননস্বাস্থ্যের মারাত্বক ক্ষতি করে। এর ফলে তার স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের অঙ্গসমূহ যেমন যোনি মুখ, যোনিপথ, জরায়ু, ডিম্বাশয়ে infection হয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস ও অন্যান্য জীবাণুর সংক্রমণ হয়। এসব infection এর ফলে সেই মেয়ে টার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমনঃ

১. তলপেটে তীব্র ব্যথা

২. রক্তশূন্যতা

৩. স্বাস্থ্যের অবনতি

৪.বন্ধ্যাত্ব

৫. অন্ধত্ব

এছাড়া ও গোপনাঙ্গে চুলকানি, যৌন মিলনে ব্যথা, প্রস্রাব এ জ্বালাপোড়া ইত্যাদি।

এসব তো গেল একটা গ্ৰামের মেয়ের মাসিক চক্রের কাহিনী। তবে কি ভাবছেন? শহরের মেয়েদের পিরিয়ড কালিন সময় খুব একটা সুখকর?

আপনার এই ধারণা কিন্তু ভুল।

একটা শহরের মেয়ে ও কখনো কখনো আর্থিক সমস্যার কারণে পিরিয়ড এর সময় কাপড় ব্যবহার করে। আর যারা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে তারা ও কিন্তু পিরিয়ড এ কম ভোগান্তিতে পড়ে না। ন্যাপকিন শেষ হলে বাবা কিংবা অন্য পুরুষদের কিনার কথা জানাতে সংকোচ বোধ করে। আর নিজেরা ফার্মেসি থেকে কিনতে গেলে অনেক অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে।

কিন্তু যে ছেলেরা মেয়ে টাকে harass করে, তারা হয়ত ভুলে যায় যে,,,

তার মায়ের পিরিয়ড না হলে এই পৃথিবীতে তার জন্ম ই হতো না।

তার স্ত্রীর পিরিয়ড না হলে সে বাবা হবার সুখ ই পেতো না।

যে নারী জাতি তাদের কে বাবা হবার সুখ দিবার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না তাদের অসম্মান করার অধিকার কোন পুরুষের নেই।

হে পুরুষ জাতি? একবার ভাবুন তো? প্রতি মাসে ৩ / ৫ দিন যে যন্ত্রণা আমরা নারী রা সহ্য করি তা আপনার হলে কি করতেন?

পারতেন সেই অস্বস্তি কর সময় কাটাতে? পারতেন সেই অসহ্যকর পেট ব্যথা সহ্য করতে?

পারতেন সেটা সহ্য করে আপনার মা কিংবা স্ত্রীর মত সংসার সামলাতে? পারতেন নারী সহকর্মীর মত অফিস সামলাতে?

পারতেন না। সেই যন্ত্রণা একবার সহ্য করলে কোন নারীর গায়ে হাত তুলতে পারতেন না, ধর্ষণ করতে পারতেন না।

পুরুষের সাথে নাকি নারীদের সমতা হতে পারে না?

আমি তো মনে করি পুরুষ কখনোই নারীর সমান হতে পারে না। শুনেছি পুরুষের নাকি নারীদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি। একবার ভাবুন তো? প্রতি মাসে যে প্রায় ৭০/৮০ মিলি কিংবা আরো বেশি রক্ত বের হয় তা একজন পুরুষের হলে সে কি নিজের শক্তি ধরে রাখতে পারতো???

সকল নারী রা বয়ঃসন্ধির পর থেকেই কোন special occasion or party এর আগে চিন্তিত থাকে। হিসেব করে সেই বিশেষ দিন আবার পিরিয়ড এর দিন না হয়ে যায়। কোথাও বেড়াতে যাবার আগে বা important কাজের আগে extra Protection হিসেবে napkins নিতে তারা ভোলে না। এসবের ভিতর দিয়ে একজন পুরুষ কখনো যায় নি। তাই তারা এটা বুঝতে পারবে না।।।

পিরিয়ড নারীদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু এই সময়ে মেয়েরা যতটা suffer করে, তার জন্য প্রতি টা মেয়ে কে আমার Salute.

আর গলা উঁচু করে বলতে পারি

“আমরা গর্বিত নারী

আমরা সবই পারি”

লেখক : আইরিন বালা