জিন্নাত রিমা:
সবেমাত্র সপ্তম শ্রেণীতে উঠেছি তখন। শ্রেণী শিক্ষকের কাছে গনিত আর ইংরেজি প্রাইভেট পড়তাম। প্রাইভেটের সময় ছিল সকাল ৮ টা থেকে। বাড়ি থেকে স্কুল দুরে হওয়ায় নিজের সুবিধার্থে থাকতাম বড় আপুর বাড়িতে। দিনটা ছিল শনিবার। অন্যদিনের ন্যায় সেদিনও প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বের হলাম। ঠিকটাক মতোন প্রাইভেটও পড়া শেষ করলাম। এবার উদ্দেশ্য ক্লাস করার। ক্লাসে ঢুকে কেন জানি অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। পড়নের সাদা পায়জামাটাও মনে হচ্ছিল ভেজা ভেজা। বাথরুমে গিয়ে চেক করলাম। পুরো পায়জামা রক্তে লাল হয়ে আছে। আঁতকে উঠলাম। প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম। তখনও ক্লাস শুরু হয়নি। তাই ছুটি না নিয়ে সোজা চলে আসলাম বাড়িতে। আপুকেও কিছু জানালাম না। নিজে নিজে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি। কতকিছু মাথায় আসছে। ভাবলাম হয়তো ভেতর ভেতর কোন রোগ বাঁধিয়ে পেলেছি। ভয় পাওয়ারই কথা আসলে তখনও যে পিরিয়ড নামক মেয়েদের এমন গোপন একটা ব্যাপার আছে সে সম্পর্কে পুরোটাই অজ্ঞ ছিলাম।
মনটাও বিষন্নতায় ভরে গেল। কি হবে? এমন লজ্জাজনক ব্যাপার কাকে বলি? কার কাছে এর সমাধান? আপু কি সমাধান দিতে পারবে? নাকি আম্মুর কাছে চলে যাব? ডাক্তার দেখাতে হবে না? একসাথে এতগুলো প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করছে। ভয় হচ্ছে। একটু পর পর বাথরুমে যাচ্ছি আপুর থেকে লুকিয়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে কাটালাম। শেষমেশ আর না পেরে আপুকে জানাতে গিয়ে কেঁদে পেললাম।
আপু শুনে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিলেন। শিখিয়ে দিল কিভাবে কি করতে হবে। তখনও ক্লিয়ার করে জানালো না বিষয়টা। আমিও কষ্ট পেলাম। মনে মনে আপুকে নিচু ভাবলাম। ছিঃ এ কেমন বোন আমার? আমার এমন একটা কথা বললাম অথচ আপুর কোনো সাড়া পেলাম না। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলল না। এভাবে মনে মনে আপুর চৌদ্দ গুষ্টি ধুয়ে ফেললাম। সারা রাত ভয়ে ঘুমালাম না। এভাবে কয়দিন কাঁটার পরও যখন দেখলাম আপু আমাকে ডাক্তারের কাছে নিচ্ছে না, তখন বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
বাড়ি এসে আম্মুকে সব বললাম। আম্মুও শুনে হাসলো। তারপর বললো এসব কোনো ব্যাপার না। মেয়েদের এমনটা হয়। তারপর মনটা শান্ত হলো।
পরের মাসে আবার দেখলাম ব্লিডিং হচ্ছে। আম্মুকে বলতে গিয়ে প্রায় কেঁদে ফেললাম। আম্মুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললাম, “আমার কোনো একটা রোগ নিশ্চয়ই হয়েছে। না হয় আবারও ব্লিডিং হবে কেন? তোমরা কেমন মানুষ আমাকে এখনও ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছ না?’
কথা শুনে আম্মুর আর হাসি থামে না। তারপরই বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলল। জানতে পারলাম, এই পিরিয়ড প্রতি মাসেই হবে। ‘
এখনও পিরিয়ড হলে প্রথম পিরিয়ডের সেই স্মৃতিটুকু মনে পড়লে হাসি, ভাবি কতই না বোকা ছিলাম।
আমাদের সময়ের সবারই হয়তো পিরিয়ড হওয়ার পরও ক্লিয়ার করে জানতো না যে এমন একটা ব্যাপার মেয়েদের সাথে প্রতি মাসেই ঘটবে। অথচ এখনকার মেয়েরা কত আপডেটেড! প্রাথমিকের গন্ডি কিংবা নিজের সাথে ঘটার আগেই জেনে যায় বিষয়টা। যার ধরুন আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে। আতংকিত হতে হয় না।