পিরিয়ডের টুকরো গল্প

আমি একজন মেয়ে। তাই আমি গর্ববোধ করি।আমি মেয়ে,তাই আমি একজন মা হতে পারি। এইটাই সবচেয়ে বড় পাওনা আমার কাছে।।মা কতটা মধুর শব্দ। মা মানে ভালোবাসা। একজন মেয়ে যেদিন প্রথম পিরিয়ড হয়,, সেইদিন টা তেই সম্ভাব্যতা চলে আসে তার মা হওয়ার।

আমি কিছু ঘটনা শেয়ার করবো। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই সব বলবো।

১. আমি তখন কলেজে পড়তাম। দ্বাদশে। আমাদের তখন প্রি টেস্ট পরীক্ষা চলছিলো। তো আমার একটা স্বভাব ছিলো।আমার পিরিয়ডের সময় হোক আর নাই হোক, ব্যাগে একটা প্যাড আমি সবসময় রাখতাম।কারণ টা হলো,আমার যেকোনো সময় পিরিয়ড হতে পারে।তাছাড়া রাস্তায় কোনো মেয়ের পিরিয়ড হয়ে যেতে পারে।আবার, আমার কোনো বান্ধবীর পিরিয়ড ও হয়ে যেতে পারে।এই ভাবনা থেকেই রাখা।যেইদিন টার কথা আপনাদের বলবো,দিন টা তে আমাদের পদার্থ বিজ্ঞানের প্র‍্যাক্টিকাল পরীক্ষা ছিলো।আমার এক বান্ধবী অনেকটা জেনেই আমার কাছে এসে বললো।তোর কাছে তো সবসময় প্যাড থাকে।আমি পিরিয়ড হয়ে গেছি হঠাৎ ডেট এর আগেই।তখন বললাম আছে তো,,দাঁড়া তুই।তো সেইদিনকার মতো একজনকে সাহায্য করতে পেরে মনে খুব শান্তি লাগছিল। কিন্তু এখন যেইটা বলবো।সেইটা আমার কাছে দুঃখের ছিলো। পরের দিন আমাদের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিলো। সেইদিন আমি পরীক্ষায় বসার একটু আগে বুঝতে পারি, আমি পিরিয়ড হয়ে গিয়েছি।কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি প্যাড রাখিনি ব্যাগে ওইদিন।মাঝে একটা দিনের ব্যবধান ছিলো। নিজের চিন্তা ভাবনা সেইদিন নিজের কাজেই পেলাম না।ভুলেই গিয়েছিলাম ব্যাগে রাখতে।আর কারো কাছে খুঁজেও পেলাম না।।পরে ম্যাম কে বলে সবার আগে পরীক্ষা দিয়ে বাসায় চলে আসি।আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে বিপদে পড়লাম না আর।

২.আরেকদিনের ঘটনা- আমি তখন ইংলিশ কোর্স করতাম একটি। সেইদিন কোর্সের শেষদিন ছিলো। তো ছুটি শেষে যাওয়ার সময় দেখলাম,,দুই বান্ধবী একটা ওয়াশরুমের সামনে ঘুরাঘুরি করছিলো, একজনের ভাব দেখেই আমি বুঝলাম,তার বোধহয় পিরিয়ড হয়ছে। সে ওয়াশরুমে ঢুকার পর, আমি গিয়ে তার বান্ধবীর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, সে প্যান্টি পড়েছে,তবে প্যাড আনেনি।আর প্যাড যে গিয়ে আনবে ওই পুরো টাকা টা ওদের ছিলো না।তাই ওর বান্ধবী ওকে বলেছে টিস্যু নিয়ে আসতে।আমি বললাম, শুনো যাওয়ার দরকার নেই।আমার কাছে একটা প্যাড আছে।এইটা তুমি ওকে ডেকে দাও।যার জন্য আমি প্যাড দিয়েছিলাম,তার সাথে আমি দেখাও করিনি। চলে এসেছিলাম আমার দায়িত্ব পালন করে।যার হাতে প্যাড টা দিয়েছিলাম।সে আমায় ভালোবেসে ধন্যবাদ দিয়েছিলো।

৩. আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়তাম।তখন আমাদের স্কুলে একটা এনজিও থেকে কিছু আপু, ভাইয়া আসতো।।প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান দিতেন। আমাদের সাথে কথা বলতেন।পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতেন।।আমি এমন একটা মেয়ে ছিলাম।আমার নিজের বোনকে একটা সময়” পিরিয়ড “কথা টা উচ্চারণ করে বলতে লজ্জা পেতাম।আমি ওই সময় টাতে কখনো প্যাড আনতে যেতাম না লজ্জায়।আজ আমি হাজার মানুষের ভিড়েও প্যাড কিনতে পারি। যেদিন থেকে এনজিও র আপু,ভাইয়া রা আসা শুরু করেছেন,আর আমাদের বুঝিয়েছেন, সেইদিন থেকে আমি কখনো আর লজ্জা পাইনি।আমি সবার সামনে দাঁড়িয়ে এখন পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে পারবো নিঃসন্দেহে। আমি সবাইকে বুঝানোর ক্ষমতা ও রাখি।আমি বিদেশী দের সামনে দাঁড়িয়ে ও একটা বক্তব্য রেখেছিলাম পিরিয়ড নিয়েই।আমি বাংলায় বলেছিলাম।আর বড় একজন আপু, ওনাদের ইংলিশে ট্রান্সলেট করে দিয়েছিলেন।তারা খুব খুশি হয়েছিলেন।আমি আজ গর্বিত, আমি নারী,আমি ও পারি।

একদিন এক আপু আমাদের অনেক জনকে জিজ্ঞেস করেছিলো,আচ্ছা বলোতো পিরিয়ডের সময় কি কারো ভালো লাগে?

সবাই বললো একদমই না।পেট ব্যাথা,শরীর কেমন যেন লাগে।হাটতে ভালো লাগেনা।খেতে ইচ্ছে করেনা কিছু। তখন আমি হাত তুলে বলেছিলাম আমার ভালো লাগে। আমার তখন দৌড়াতে ভালো লাগে,হাসেতে ভালো লাগে,খেলতে ভালো লাগে। আমি জিনিসটা টাকে স্বাভাবিক ভাবেই ভাবতে চাই।তখন আপু হেসে বললো।গুড গার্ল।তবে তখন পিরিয়ডে আমার পেট ব্যাথা না হলেও এখন খুব ব্যাথা হয়। আমি বিছানা থেকেও উঠতে পারিনা।এমন যন্ত্রণা সহ্য যখন করতে পারিনা,আমি কাঁদি।। মাঝে মাঝে ক্লাস নাইনে আপুকে যেই কথা টা বলেছিলাম সেইটা ভেবে হাসি ।তবে,এখন আমি ভাবি,আমি যদি এই ব্যাথা সহ্য করতে না পারি,আমি মা হবো কি করে?

মা দের আরো অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়। বিশ্বাস করেন, এই কথা ভাবলে কোনো কষ্ট আর কষ্টই মনে হয় না।

বিঃদ্রঃ আমি মনে করি সব মেয়েদের পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার।একটি প্যান্টি আর একটি প্যাড সবসময় মেয়েদের ব্যাগে থাকা দরকার।এতে তার নিজের কাজে না আসলেও সে অন্য কে সাহায্য করতে পারে যেকোনো সময়

লেখক: ছৈয়দা ফারজানা ইয়াছমীন, শিক্ষার্থী